দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল

         অধ্যায় তৃতীয়: দ্বাদশ শ্রেণী ইতিহাস
প্রশ্ন:-লর্ড কর্ণ‌ওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল আলোচনা করো।:-
উঃ:-হেস্টিংসের পর লর্ড কর্ণ‌ওয়ালিশ ভারতে গর্ভনর জেনারেল হয়ে আসেন।তিনি ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে দায়িত্বভার গ্ৰহনের পরেই ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দূর করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় প্রথমে দশশালা বন্দোবস্ত চালু করলেও স্থায়ী ভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান।শেষ পর্যন্ত ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন ।এটি জমিদারি ব্যবস্থা নামেও পরিচিত ছিল।এই ব্যবস্থা বাংলা,বিহার ও উড়িষ্যায় প্রবর্তিত হয়।
        ⭕ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তাবলী:-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের শর্তাবলী গুলি হল, যথা-
১)সরকারকে নির্দিষ্ট রাজস্ব প্রদানের বিনিময়ে জমিদার শ্রেণী বংশানুক্রমিক ভাবে জমির মালিকানা ভোগ করবেন ।
২) যেকোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ সত্বেও রাজস্বের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকবে।
৩)বৎসরে নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে কোন জমিদার সরকারি রাজস্ব জমা দিতে না পারলে সেই জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হবে ।
                 ⭕ কোম্পানির উদ্দেশ্য:-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পশ্চাতে কোম্পানির বিশেষ উদ্দেশ্যগুলি হলো:-
১) কোম্পানি আশা করেছিল যে এই ব্যবস্থায় সরকার নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব পাবে।
২)এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে রাজকীয় অনুগ্ৰহপুষ্ট একটি নতুন অভিজাত সম্প্রদায় গড়ে উঠবে,যারা তাদের প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করবে।
৩)কর্ণ‌ওয়ালিশ আশা করেন যে ,জমিতে স্থায়ীভাবে স্বত্ব পেলে জমিদাররা কৃষির উন্নতির জন্য জমিতে বিনিয়োগ করবেন।এতে দেশ সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে।
⭕ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল:-
এই ব্যবস্থার ফলাফল হিসেবে দুটি দিক লক্ষনীয়-
                 ⭕ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল:-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর সুবিধা গুলো হল:১)এই ব্যবস্থায় ভারতে রাজকীয় অনুগ্ৰহ পুষ্ট একটি নতুন অভিজাত শ্রেণী গড়ে ওঠে ।যারা সরকারের প্রধান সমর্থক ছিলেন।
২)কৃষির উন্নতি ঘটে ,ফলে জমি থেকে সরকারের নির্দিষ্ট বার্ষিক আয় সুনিশ্চিত হয়।
৩) নির্দিষ্ট খাজনার বিনিময়ে জমিদাররা  বংশানুক্রমিক ভাবে জমি ভোগ করার ফলে তারা তাদের জমিদারি হারানোর ভয় থেকে মুক্ত হল।এর ফলে তারা জমিগুলোর উন্নতি করতে উৎসাহী হল।
৪) দেশের কৃষিযোগ্য আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
             ⭕ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল:-
এই ব্যবস্থায় সুফল থাকলেও বেশ কিছু কুফল লক্ষ্য করা যায়,এগুলি হল -
১)এই ব্যবস্থায় জমিদার রাজস্ব আদায়কারী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা বিশেষ লাভবান হলেও কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ খুব‌ই বৃদ্ধি পেয়েছিল।
২) চিরস্থায়ী ব্যবস্থায়  জমিদারদের আয় বৃদ্ধি পেলেও সরকারি আয় সেই অনুপাতে বাড়েনি।এই কারনেই হোমস বলেছেন-“The permanent settlement was a sad blunder"
৩) চিরস্থায়ী ব্যবস্থার অন্যতম কুফল হল পাটনি প্রথার উদ্ভব ।কোন কোন জমিদার প্রজাদের কাছ থেকে সময়মতো খাজনা আদায় করার অসুবিধা দূর করার জন্য নির্দিষ্ট মূল্যের পরিবর্তে জমিদারির অংশ ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে দেন।
৪)এই ব্যবস্থার ফলে বিনা পরিশ্রমে বহু আয়ের অধিকারী হ‌ওয়ায় জমিদাররা প্রায়ই জমির প্রতি উদাসীন থেকে শহরের বিলাস ব্যসনের মধ্যে জীবন কাটাতেন।
৫)এই ব্যবস্থায় কৃষকদের উপর শোষন ও অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়।ফলে তারা মাঝে মাঝে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।এরূপ পরিস্থিতিতে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে প্রজাদের স্বার্থ সুরক্ষা করার চেষ্টা করা হয়।
⭕মন্তব্য:-ভালো -মন্দ বিচারে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বহু সমালোচনা থাকলেও এই ব্যবস্থা অনেকখানি সাফল্য লাভ করে।রাজা রামমোহন রায়,মার্শম্যন ,ও রমেশচন্দ্র মজুমদার এই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন।বাস্তবিক পক্ষে এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে ভারতের বহু অঞ্চলের ভূমিরাজস্ব সমস্যার আপাতত কিছুটা সমাধান সম্ভব হয়েছিল।
Dipak Kumar:------

Comments